গবেষণায়
যারা নতুন তারা প্রায়ই টপিক সিলেকশনের ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ে যায়। অর্থাৎ কি নিয়ে বা
কোন বিষয়ের উপর গবেষণা করবেন বা টপিক সিলেক্ট করবেন সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। যেহেতু
গবেষণায় নতুন সেহেতু এই অসুবিধা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। পাশাপাশি চিন্তা করতে গেলে
একই সাথে অনেক দারুণ দারুণ আইডিয়া তৈরি হওয়া
একটা কমন সমস্যা। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের উপায় হচ্ছে সিস্টেম্যাটিক চিন্তা ভাবনা করা।
তাহলে চিন্তা করবো কিভাবে বা গবেষণার বিষয় নির্বাচন কিভাবে করবো
সাধারণত
গবেষণায় আমরা খুব স্পেসিফিক অবজেক্টিভ নিয়ে কাজ করি। অর্থাৎ খুব বড় এরিয়া কভার না করে
ঐ বড় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত আরো ছোট ও নির্দিষ্ট
একটা বিষয়ে ফোকাস করা হয়। আর এই স্পেসিফিক
অবজেক্টিভ এ আসার আগে আপনাকে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে।
একদম
প্রথম ধাপে আপনাকে পছন্দ করতে হবে আপনি কি নিয়ে গবেষণা করবেন। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক
আপনি অর্থনীতির ছাত্র। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই ফোকাস করবেন আপনার ক্লাসে পড়ানো কোর্সের
উপর। খুঁজে বের করবেন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি। যেমন অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে আপনাকে
হয়ত ম্যাক্রো, মাইক্রো ডেভলপমেন্ট ইকনমিক্স
পড়তে হবে। আমি ধরে নিলাম এদের যে কোন একটা বিষয় আপনার কিছুটা ভালোলাগে। এমনও হতে পারে
যে পুরো সাবজেক্ট ভালো না লাগলেও হয়ত কয়েকটা চ্যাপ্টার বা টপিক্স আপনার ভালো লেগেছে।
ভালো লেগে থাকলে আমাদের যেতে হবে দ্বিতীয় ধাপে।
দ্বিতীয়
ধাপটা গুরুত্বপুর্ন খুব। কারণ এইধাপে আপনি অনেকটাই স্পেসিফাই করে ফেলবেন যে কোন বিষয়ে
আপনি গবেষণা করতে যাচ্ছেন। ধরে নিলাম প্রথম ধাপের কোন একটা সাবজেক্ট এ আপনি পোভার্টি
বা দারিদ্রতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে হয়ত আপনি বেশ কিছু বিষয় শিখেছেন। যেমন এটি
কি, বিষয়টা আপনার দেশের প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দারিদ্রতা পরিমাপের পদ্ধতি
সহ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি দারিদ্রতা নিয়ে অন্তত কিছুটা জানেন। এই ধাপে
আপনি আরো স্পেসিফিক হয়ে গেলেন যে আপনি কোন বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আপনি
যদি এখন দারিদ্রতা নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের যেতে হবে এর পরের ধাপে।
তৃতীয়
ধাপ আবার কিছুটা জটিল। কারন দারিদ্রতা নিয়েই গবেষণার হাজার রকম ডাইমেনশান পাবেন আপনি।
শুধু ডাইমেনশন না, সমস্যা আরো জটিল হবে যখন আপনি দারিদ্রতার সাথে অন্য বিষয় যুক্ত করতে
চাইবেন বা অনেক সময় বাধ্য হবেন। এই ধাপে আপনাকে আরো স্পেসিফিক হতে হবে। কারন আপনি তো
চাইলেই দারিদ্রতা কভার করে এমন সব ডাইমেনশন নিয়ে একই সময়ে কাজ করতে পারবেন না। স্পেসিফিক
হবার ক্ষেত্রে আপনি দুইটা পন্থা অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমত আপনার নিজের যদি আইডিয়া
থাকে যে কেমন ধরনের গবেষণা হয় তাহলে সেখান থেকে আপনি পছন্দ করতে পারেন। অথবা আপনি চলে
যাবেন গুগল স্কলারে। সেখানে গিয়ে আপনি কিছু কি ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে আপনি বিভিন্ন
গবেষণার বিষয়বস্তু পাবেন। সেখান থেকে কয়েকটা রিসার্চ আর্টিকেল পড়লে আপনি কিছুটা আইডিয়া
পেয়ে যাবেন।
ধরে
নেই আপনি নিজের আইডিয়া থেকে বা গুগল করে কয়েকটা বিষয়বস্তু পেলেন। যেমন, factors
affecting poverty, causes of poverty, impact of policies on poverty reduction ইত্যাদি।
এরকম কয়েকটা আইডিয়া পেয়ে গেলে আপনাকে যেতে হবে এর পরের ধাপে।
চতুর্থ ধাপে আপনি আরো সেপ্সিফিক হবেন। উপরের বিষয়বস্তু গুলো থেকে আরো স্পেসিফিক হতে হলে এবার আপনাকে দুইটা বিষয় ভাবতে হবে। এর প্রথমটা হলো ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করার দক্ষতা বা সাপোর্ট (আপনি না পারলেও এনালাইসিসের ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করার মত কেউ আছে কিনা) আপনার আছে কিনা। দ্বীতিয়ত, আপনি আগ্রহী কিনা। অনেক সময় এমন হতে পারে আপনি হয়ত কোন একটা বিষয়ে খুব আগ্রহী কিন্তু সেই বিষয়ে গবেষণা করার মত জ্ঞান বা সাপোর্ট আপনার নেই। সেসব ক্ষেত্রে উচিৎ হবে একটা বিষয় নির্বাচন করা যেটাতে অন্যের উপর আপনাকে কম নির্ভরশীল হতে হয়।
আমরা
ধরে নিলাম factors affecting poverty নিয়ে গবেষণা করবেন।
এখন প্রশ্ন হলো আপনি কিভাবে
বুঝবেন যে এই বিষয়বস্তু আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে কিনা?
এসব
ক্ষেত্রে আমরা নতুন যারা গবেষণা শুরু করছি তারা অন্য গবেষণাপত্র ফলো করি। অর্থাৎ আপনি
যে বিষয়ে আগ্রহী সে সংক্রান্ত কিছু গবেষণাপত্র পড়বেন। তাহলে এই ধাপে আপনি factors
affecting poverty লিখে গুগল স্কলারে সার্চ করলে এ সংক্রান্ত অনেক গবেষণাপত্র পেয়ে
যাবেন। সেখান থেকে দুই একটা গবেষণাপত্র পরে ফেললে আপনি বেশ কিছুটা ধারনা পেয়ে যাবেন।
বিশেষ করে ম্যাটারিয়ালস ও মেথডস সেকশনটা মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন যে এই ধরনের
কাজ আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে কিনা।
অন্যভাবে গবেষণার বিষয় নির্বাচন পদ্ধতি ধাপগুলোকে নিন্মক্তভাবে লেখা যেতে পারে
পদক্ষেপ
১: ধারণার জন্য ব্রেইনস্টর্ম করুন
ব্রেইনস্টর্ম
গবেষণা বিষয় নির্বাচনের সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এমন একটি বিষয়
নির্বাচন করা প্রয়োজন যা একজন
গবেষককে পূর্ববর্তী কার্যপ্রতিবেদন বা ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে পড়তে ও বুঝতে সক্ষম
করবে। বিষয় উপযোগী ও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন এক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করতে
পারে। উদাহরণস্বরূপ,
–
নির্বাচিত বিষয়টির বর্তমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, বা রাজনৈতিক বিতর্কের ওপর কি কোনো
দৃঢ় মতামত আছে বা থাকলেও তার পরিসীমা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত?
–
নির্বাচিত বিষয়টির সাম্প্রতিক কোনো প্রতিবেদন কি আপনার আগ্রহকে প্রকাশ করছে বা
আপনি কি উদ্বিগ্ন?
–
নির্বাচিত বিষয়টির সাম্প্রতিক প্রকাশিত সম্ভাব্য সমস্যা বা সমাধান সম্পর্কে কি
আপনি আরও জানতে বা জানাতে চান?
পদক্ষেপ
২: সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য পড়ুন
প্রাসঙ্গিক ও বিশদ লিটারেচার রিভিউ বা সাহিত্য পর্যালোচনা নির্বাচিত বিষয়ের কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হিসেবে বিবেচিত। ব্যাকগ্রাউন্ড অধ্যয়নের সময় সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত নিবন্ধসমূহকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। একটি বিস্তৃত সারসংক্ষেপ আপনার নির্বাচিত ধারণাটির বিস্তৃতি, সীমাবদ্ধতা এবং আপনার জিজ্ঞাসিত বা উদ্ধৃত প্রশ্নসমূহের উত্তর ও সম্পৃক্ততা প্রকাশ করতে সক্ষম।
পদক্ষেপ ৩: নির্বাচিত বিষয়ের উপর ফোকাস করুন
নির্বাচিত বিষয়টি খুব বিস্তৃত বা সঙ্কীর্ণ হলে উক্ত বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা খুব কঠিন। একটি বিষয় সুনির্দিষ্ট, সীমাবদ্ধ, তথ্যপূর্ণ ও পরিচালনাযোগ্য করার কিছু সাধারণ উপায় হলো নির্বাচিত বিষয়টিকে বিষয়-সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট উপাদান দ্বারা আবদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করা। যেমন, ভৌগলিক এলাকা, সাংস্কৃতিক অবকাঠামো, টাইমফ্রেম, নির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি ইত্যাদি।
পদক্ষেপ
৪: গুরুত্বপূর্ণ কি-ওয়ার্ডগুলোর তালিকা তৈরি করুন
যে
সকল শব্দ বা শব্দগুচ্ছ আপনার নির্বাচিত বিষয়কে সঠিক ও সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে
সক্ষম, তাদের কি-ওয়ার্ড সন্ধান করুন ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য
অধ্যয়নের সময় তালিকাভুক্ত কি-ওয়ার্ডগুলোর বিস্তৃতি, ব্যবহার ও উপযোগিতা আপনার
নির্বাচিত বিষয়টির মূল ধারণাগুলোকে সমন্বিত করতে সহায়তা করবে।
পদক্ষেপ
৫: নমনীয় হোন
গবেষণা
চলাকালীন গবেষণা বিষয়ের পরিবর্ধন, পরিমার্জন, পরিবর্তন ও পরিশোধন একটি চলমান
প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যা পেয়েছেন তা সম্পর্কে আপনি কখনোই নিশ্চিত নাও
হতে পারেন। কিংবা আপনি যা পেয়েছেন, তা অতিসঙ্কীর্ণ বা অতিবিস্তৃত। ফলে আপনার
ফোকাসকে সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করার প্রয়োজন হতে পারে।
তাহলে এতক্ষনে আপনি কিন্তু মোটামুটি স্পেসিফিক করে ফেলছেন
যে আপনি কোন বিষয়ে গবেষণা করবেন। আর এভাবে আপনি আপনার সাবজেক্ট অনুসারে যে কোন কোন
বিষয়েই ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে আপনার পছন্দের গবেষণার টপিক নির্বাচন করে ফেলতে
পারেন।
0 Comments