গবেষণা করা ছাড়াও আরো বিভিন্ন একাডেমিক কাজে আমাদের রিসার্চ পেপার পড়া প্রয়োজন হয়। একেকটা রিসার্চ পেপার সম্পূর্ণ পড়ে সেখান থেকে তথ্য বের করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমের কাজ। বিশেষ করে যারা একদম নতুন গবেষক তাদের জন্য গবেষণাপত্র পড়াটা খুবই বিরক্তিকর। তাই কম সময়ে ফলপ্রসূভাবে রিসার্চ পেপার পড়তে কিছু কৌশল জানা প্রয়োজন। পেপার পড়াটা শুরু করবেন শুধুই জানার জন্য। প্রথমবার একবার রিডিং দিয়ে যাবেন, আপনাকে আত্মস্থ করতে হবে কিংবা টুকে রাখতে হবে বিষয়টা এমন না। কেননা প্রথমবারেই ভালোভাবে পেপার পড়তে গেলে প্রতিটি লাইনই গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে যা যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিডিং পড়ে যখন আপনি পুনরায় সেটি পড়া শুরু করবেন, তখন আপনাআপনি কিছু বিষয় আপনার নজরে আসবে যা স্বভাবতই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। লেখাগুলোতে চোখ বুলিয়ে যেতে যেতে যদি আপনি মস্তিষ্ককে চাপ না দিয়ে শুধু জানার জন্য পড়ে যান তাহলে দেখবেন পেপার পড়াটা অতটাও বিরক্তিকর লাগছে না। সেই সাথে রয়েছে কিছু শর্ট টেকনিক। এই কৌশলগুলো অবলম্বন করলে সময় ও শ্রম দুটোই কাজে লাগবে। একই সাথে সঠিক সঠিক পদ্ধতিতে গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস তৈরি হবে। So, lets know, how to read a research article!!
1. Check the publish date
পেপারের পাবলিশ ডেট দেখে আপনি প্রথমেই বুঝতে পারবেন যা কিছু পড়তে যাচ্ছেন সেই কাজটা কত আগের এবং এই তথ্যগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ হবার সম্ভাবনা কতখানি অথবা এই পেপার আপনার গবেষণার কতখানি কাজে লাগতে পারে। এর মূল কারন হলো গবেষণাপত্র পড়ার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত গবেষণগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। বিশেষ করে ৫ বছর পূর্বের গবেষণাপত্র পড়তে নিরুৎসাহিত করা হয়। আপনি যত সাম্প্রতিক পেপার পড়বেন তত নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য তথ্য পাবেন।
2. Read the title & journal name
যে পেপারটি নিয়ে বসে আছেন সেটার টাইটেল ভালো করে পড়ুন। অনেক সময় শুধু টাইটেল পড়েই পেপারের বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা যায়। মেইন কী ওয়ার্ডগুলো টাইটেলেই থাকে। টাইটেল কয়েকবার পড়ে আপনি বুঝতে পারবেন যে এই গবেষণাপত্রটি আপনি রিসার্চ ইন্টারেস্টের সাথে যাচ্ছে কিনা। যেহেতু আমাদের হাতে খুব বেশি সময় থাকে না সেহেতু টাইটেল দেখেই আমাদের মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আসলে আমরা গবেষণাপত্রটি পড়বো কিনা। টাইটেলের পাশাপাশি আমাদেরকে খেয়াল করতে হবে জার্নালের নাম। যেহেতু অনেক গবেষণাপত্র ভালো জার্নালে প্রকাশিত হয় না সেহেতু গবেষণাপত্র পড়ার আগেই খেয়াল করতে হবে যে এটি কি ধরনের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি যে জার্নালে আপনার পেপার পাবলিশ করতে ইচ্ছুক সেই জার্নাল থেকে পেপার পড়লে আপনার পেপারের স্ট্রাকচার কেমন হওয়া উচিৎ, কি ধরনের তথ্য পেপারে থাকা উচিৎ, রেফারেন্স স্টাইল কেমন হবে, গ্রাফিকাল ইনফরমেশন কেমন লাগবে সেইসব সম্পর্কে জেনে যাবেন।
3. Read the abstract
টাইটেল দেখার পরেই গুরুত্ত্ব্পূর্ণ কাজ হলো Abstract ভালো করে পরা। Abstract-এ একটু গবেষণার সারাংশ থাকে। অর্থাৎ গবেষণার উদ্দেশ্য, কি ধরনের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং পুরো গবেষণা মূল ফলাফল কি ছিলো সেটা Abstract থেকেই বুঝে নেয়া যায়। এতে করে পুরো পেপারটায় কি কি পাবেন সেই সম্পর্কে যেমন ধারণা পাবেন, তেমনি এই পেপারটা আপনার কাজের সাথে কতটুকু সদৃশ সেটিও বুঝতে পারবেন। মুলত টাইটেল ও এবস্ট্রাক্ট দেখেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনি আদৌ গবেষণাপত্রটি পড়বেন কিনা। তবে মাথায় রাখবেন, abstract কিন্তু পেপারের সামারি নয়, এটি পুরো পেপার সম্পর্কে আপনাকে একটি সম্যক ধারণা দেবে মাত্র।
4. Concentrate on both Introduction & conclusion
গবেষণাপত্র পড়ার সিদ্ধান্ত নেবার পরে আপনাকে প্রথমেই ফোকাস করতে হবে ইন্ট্রোডাকশন ও কনক্লুশনের উপরে। একজন গবেষক কি নিয়ে এবং কেন কাজ করতে চাচ্ছেন সেটা Introduction বা ভূমিকায় লিখে থাকেন। এই কাজের উদ্দেশ্য, পূর্ববর্তী কাজের সাথে সম্পর্ক এবং প্রত্যাশিত ফলাফল উল্লেখ থাকে।উক্ত পেপারের কাজ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়েও এখানে উল্লেখ থাকে। ইন্ট্রোডাকশন পড়ার সময় নতুন নতুন শব্দগুলো (আপনার রিসার্চ এরিয়ার সাথে সম্পর্কিত) নোট করে নিতে পারেন। এতে পরবর্তিতে নতুন নতুন গবেষণাপত্র পড়ার সময় আপনাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
Conclusion বা উপসংহারে গবেষকেরা তাদের গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হয়ে থাকেন। পাশাপশি কি ফলাফল পেয়েছেন, তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছেন কিনা, এবং তাদের সীমাবদ্ধতা কি কি ছিলো সেটাও উল্লেখ করেন। পাশাপশি একই গবেষণা এরিয়াতে আরো কি কি কাজের সম্ভাবনা আছে এই বিষয়ে জানা যায় colclusion এ। এছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান যা কি না উনারা নিজেরা কাজ করতে গিয়ে সম্মুখীন হয়েছেন সেই বিষয়েও উল্লেখ থাকে যেন তা ভবিষ্যৎ গবেষণায় কাজে লাগানো যায়।
5. Go through the Result and discussion
এই সেকশনে একটু সময় ব্যায় করে বুঝেশুনে আপনাকে পড়তে হবে। ডাটার ধরণ, এনালাইসিস কিভাবে করা হলো, কেন করা হলো, এনালাইসিস করে ফলাফল কেমন এসেছে, প্রত্যাশিত ফলাফলের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্য আছে বা নেই, কোন ডাটা কি নির্দেশ করছে, কোন মডেল এখানে ব্যাবহৃত হয়েছে এবং কেন হয়েছে, মডেলের ফিটনেসের যৌক্তিকতা কতখানি, এই সমস্ত বিষয়ের বিশদ বর্ণনা আপনি এখানে পাবেন যা কি না আপনার জানা সবচেয়ে জরুরী। রেজাল্ট ডিসকাশন মন দিয়ে খুঁটে খুঁটে পড়তে গেলে আপনার কয়েক ঘন্টাও প্রয়োজন হতে পারে, তবে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে গেলে এই সেকশন পড়ার কোন বিকল্প নেই।
রেজাল্ট এনালাইসিস পার্টটুকু মনযোগ দিয়ে দেখুন। অথর কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটি নিজে বোঝার চেষ্টা করুন। গ্রাফিক্যাল ডাটা থাকলে সেটি পর্যবেক্ষণ করুন। সংখ্যার পরিবর্তন, সালের পরিবর্তন, গ্রাফের ফ্লাকচুয়েশন যেন আপনার চোখ এড়িয়ে না যায়। পেপারের মডেল সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন, কোন নির্দিষ্ট মডেল কেন ব্যাবহৃত হলো সেই সম্পর্কে জানুন। এবং এই সমস্তকিছু বিশদভাবে তখনই জানতে পারবেন যখন আপনি এই সেকশনে যথেষ্ট সময় ব্যায় করবেন।
6. Take notes
প্রতিটি ধাপে পেপার পড়ার সময় যেই বিষয়গুলো আপনার নজরে আসবে যা কি না পরবর্তীতে আপনার কাজে লাগতে পারে বলে মনে হয় সেগুলো নোট করে রাখুন। হতে পারে কাগজে কলমে টুকে রাখা, হতে পারে গুগল ডক কিংবা ওয়ার্ডে লিখে সেভ রাখা, অথবা সেই ডকুমেন্টে মার্ক করে সেভ রাখা। তবে প্রথমবার পেপার পড়ার সময়েই নোট নেয়া এজন্য প্রয়োজন যে পরবর্তীতে এই পেপারটা আপনার দরকার হলে শুধু নোটে চোখ বুলিয়ে যাওয়াই যথেষ্ট হবে। নতুন করে সময় দিতে হবে না। তাই নোট নিয়ে রাখা আপনার একটা পেপার পড়ায় দেয়া সময়টাকে ফলপ্রসূ করতে পারে।যতগুলো পেপার পড়বেন প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবে নোট করুন, সবগুলো নোট একসাথে সেভ রাখুন। এতে প্রয়োজন অনুসারে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামারি আকারে হাতের কাছে পেয়ে যাবেন যেটি আপনার কাজে অনেক হেল্পফুল হবে।
রিসার্চ পেপার পড়ার সবচেয়ে সহজ ধাপগুলোই এগুলো। তবে এই ধাপেই যে আপনাকে সবসময় এগুতে হবে বিষয়টা এমন না। আপনি যদি পেপারের আগাগোড়া প্রতিটি লাইন পড়ার মত ধৈর্য্য এবং সময় হাতে রাখতে পারেন তাহলে ক্ষতি নেই। শুধু এমনভাবে পড়বেন যেন সেটা আপনার কাজে লাগে।
1 Comments
Thanks for sharing knowledge! Jajakillahu Khair! It is so helpful for the beginner like me!
ReplyDelete