Ticker

6/recent/ticker-posts

কিভাবে লিখবে গবেষণাপত্রের টাইটেল । How to Write Research Paper

 





আমরা যখন একটা গবেষণাপত্র পড়ার কথা ভেবে থাকি, তখন প্রথমেই ঐ গবেষণাপত্রের টাইটেলটাই (গবেষণাপত্রের নাম) আগে দেখি। প্রশ্ন হলো, কেনইবা আমরা প্রথমে গবেষণাপত্রের টাইটেল বা নাম দেখি?  


সেই উত্তরে যাবার আগে আমরা একটু নিজেদের প্রশ্ন করি যে, আমরা ঠিক কখন গবেষণাপত্র পড়ি? এর কয়েকটা কারন থাকতে পারে। যেমন,  কোন নতুন তথ্য জানার জন্য, নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনে অথবা আমি যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গবেষণা করতে চাই, তখন আসলে আমাদের প্রয়োজন হয় গবেষণাপত্র পড়ার। 


একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, গবেষণাপত্র খোঁজার সময় আমরা কিছু নির্দিষ্ট শব্দ (Keywords) মনে মনে ঠিক করে রাখি এবং ঐ সকল শব্দ সংবলিত গবেষনাপত্রগুলোই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পড়ে থাকি। অথবা, আমাদের কাছে যদি কোন গবেষণাপত্রের টাইটেল/নাম যদি খুব বেশি আকর্ষণীয়  লাগ,  তখনো আমরা ঐ আকর্ষণীয়  লেখাগুলো পড়ি।  


এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়! 


গবেষণাপত্র যিনি পড়বেন শুধুই কি তিনি টাইটেল দেখেন? সেটা কিন্তু না। একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করার জন্য যখন কোন জার্নালে সাবমিট করা হয় বা জমা দেয়া হয় সেক্ষেত্রেও জার্নাল ইডিটর এবং যিনি গবেষণাপত্রটি রিভিউ করবেন (অর্থাৎ,  গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করার  মত কিনা সেটা যাচাই করবেন), তিনিও কিন্তু গবেষণাপত্রের টাইটেল আগে দেখবেন। 


তাহলে কিভাবে লিখবেন গবেষণাপত্রের টাইটেল? 


গবেষণাপত্রের টাইটেল কিভাবে লিখতে হয় সেটা জানার আগে আমরা একটু জেনে নিবো টাইটেল কেন গুরুত্বপূর্ন?

একটা উদাহরণ খেয়াল করি। মনে করি আপনি “nursing”, “communication” or “meditation” এই তিনটা কি-ওয়ার্ড লিখে গুগল সার্চ করলেন এবং দেখা গেলো আপনি নিচের চারটি রেজাল্ট পেলেনঃ -


  1. Benefits of Meditation for the Nursing Profession: A Quantitative Investigation

  2. Why Mindful Nurses Make the Best Communicators

  3. Meditation Gurus

  4. Nurses on the Move: A Quantitative Report on How Meditation Can Improve Nurse Performance

উপরের চারটি টাইটেল দেখলে এরকম মনে হবে যে এরা একই ধরনের গবেষণার টাইটেল অথবা একই গবেষণার ভিন্ন চারটি টাইটেল। সেক্ষেত্রে একই গবেষণার টাইটেল বা ভিন্ন গবেষণার টাইলেট হোক না কেন,  এরা কিন্তু একজন রিডারের উপর ভিন্ন ভিন্ন ইমপ্রেশন বা প্রভাব ফেলে। 

যেমন ধরুন, 


১ নং টাইটেলে গবেষণার বিষয়বস্তু ও মেথডস বর্ণনা করলেও, যিনি টাইটেলটা দেখবেন তার কাছে অতটা আকর্ষণীয় মনে হবেনা। 


২ নং টাইটেল গবেষণার বিষয়বস্তুকে খুব আংশিক ভাবে বর্ণনা করছে এবং মেথডস সম্পর্কে কোন ধারণা দেয় না। প্রথম দেখাতে এই গবেষনাপত্রকে অনেকটা থিওরিটিক্যাল বা অভিমত প্রকাশ করেছে বলে মনে হয়। 


৩ নং টাইটেল কিছুটা আকর্ষণীয় হলেও এই টাইটেলটি গবেষণার বিষয়বস্তু  সম্পর্কে তেমন কোন সুস্পষ্ট ধারণা দেয় না।


৪ নং টাইটেল দেখলে প্রথম অংশটা খুব আকর্ষণীয় মনে হয় এবং একই সাথে পরের অংশ গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ও মেথডস সম্পর্কে খুব স্পষ্ট একটা ধারণা দেয়। যেটা আসলেই একজন রিডারকে ঐ গবেষণাপত্রটি পড়তে আগ্রহী করে।


এবং শেষমেশ আমরা দেখতে পাবো ৪ নং টাইটেলই একটা আদর্শ টাইটেলের বৈশিষ্ট্য গুলো বহন করে। 


একটা ভালো টাইটেল এর বৈশিষ্ট্য 

প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, একটি গবেষণাপত্রের টাইটেল কেমন হবে সেটার কোন স্বতসিদ্ধ নিয়ম নেই। এটা সাধারণত গবেষকের চিন্তাধারা বা অভিমতের উপর অনেকটা নির্ভর করে। 

তবে, গবেষণাপত্রের টাইটেল লেখার কোন স্বতঃসিদ্ধ  নিয়ম  না থাকলেও সব গবেষণাপত্রের টাইটেল মোটামুটি কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বহন করে। 


সেগুলো কি  কি? 

প্রথমত, একটা ভালো টাইটেল গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালো ধারণা দিবে,

দ্বিতীয়ত, যিনি গবেষণাপত্র খুঁজছেন বা পরবেন তার কাছে টাইটেলটা ইন্টারেস্টিং বা আকর্ষণীয় হতে হবে,

তৃতীয়ত, কিভাবে বা কোন মেথডস ব্যবহার করে গবেষণাপত্রটি লেখা হয়েছে সেটা প্রকাশ করবে,

চতুর্থত, গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কীওয়ার্ড বা শব্দগুলো টাইটেলে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। 


টাইটেল লেখার সময় যদি এই চারটা বিষয় বিবেচনায় রাখা যায় তাহলে একটা ভালো টাইটেল লেখা সম্ভব।  


এখন একটু লক্ষ্য করি যে, উপরের দেয়া চারটি টাইটেল কি একটা আদর্শ গবেষণাপত্রের বৈশিষ্টগুলো বহন করলো? 


টাইটেল 

আর্টিকেল সম্পর্কে ধারণা 

আকর্ষনীয়

লেখার ধরণ

গুরুত্বপূর্ণ কী ওয়ার্ড

Benefits of Meditation for the Nursing Profession: A Quantitative Investigation

হ্যাঁ 

না 

না

হ্যাঁ 

Why Mindful Nurses Make the Best Communicators

না 

হ্যাঁ 

হ্যাঁ 

না 

Meditation Gurus

না 

হ্যাঁ 

না 

না 

Nurses on the Move: A Quantitative Report on How Meditation Can Improve Nurse Performance

হ্যাঁ 

হ্যাঁ 

হ্যাঁ 

হ্যাঁ 


উপরের টেবিল থেকে আমরা দেখতে পাই, একমাত্র ৪ নং টাইটেল বাদে অন্য কোন টাইটেল সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি বহন করেনি। 


গবেষণাপত্রের টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে নিচের কৌশল গুলো মনে রাখুন 

টাইলেট লেখার ক্ষেত্রে উপরের উল্লেখিত চারটি বৈশিষ্ট্যই পর্যাপ্ত হলেও আরো সুন্দর/কার্যকর টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোও জেনে রাখতে পারেন। 


১।  গবেষণাপত্রের টাইটেল যেন গবেষণার বিষয়বস্তু ও মেথডস খুব ভালোভাবে প্রকাশ  করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই দুইটার পাশাপাশি অনেক সময় টাইটেলে গবেষণাপত্রের ফলাফলও উল্লেখ করতে পারেন। 

যেমনঃ Meditation makes nurses perform better: a qualitative study of mindfulness meditation among German nursing students 


২। টাইটেল  এ যতদুর সম্ভব অপ্রয়োজনীয় ও কঠিন শব্দ এড়িয়ে চলা ভালো। অপ্রয়োজনীয় ও কঠিন শব্দ এড়িয়ে চলার প্রধান কারন হচ্ছে গবেষণাপত্রের টাইটেল এমন হওয়া চাই যেন যে কারো কাছেই গবেষণার বিষয়বস্তু সহজবোধ্য হয়। 


৩। চেষ্টা করতে হবে টাইটলেট যেন ১০-১৫ শব্দের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কোন ভাবেই যেন ২০ শব্দের বেশি না হয়। 


৪। যিনি গবেষণাপত্রটি পড়বেন তার উপরে পজেটিভ প্রভাব তৈরি করবে বা পুরো গবেষণাপত্র পড়তে আগ্রহ তৈরি করবে এরকম শব্দ ব্যবহার করাটা বেশি ভালো। 


৫। একই গবেষণাপত্রের জন্য কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন টাইটেল লিখে রেখে পরবর্তিতে বিষয়বস্তুর জন্য উপযুক্ত টাইটেল ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্শনীয় টাইটেল খুঁজে নিতে আপনার শিক্ষক, সুপারভাইজর বা অন্য কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। 


৬। কেউ অনলাইনে সার্চ করলে বা খুঁজলে আপনার গবেষণাপত্রটি প্রথম দিকে আসবে কিনা সেটার অনেকটা নির্ভর করে টাইটেলে থাকা শব্দ গুলোর (মূল কিওয়ার্ড) উপর।  এইকারনে আপনার গবেষণাপত্রটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এরকম গুরুত্বপূর্ণ শব্দ গুলো টাইটেলে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে আপনার গবেষণাপত্রের ভিজিবিলিটি (দৃশ্যমানতা) বৃদ্ধি পাবে। 


৭। আপনার গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেছে সেরকম কিছু গবেষণাপত্র দেখতে পারেন। এটি আপনাকে টাইটেল সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে সাহায্য করবে। তাছাড়া, আপনার যদি কোন নির্দিষ্ট জার্নালে গবেষণাপত্র জমা দেবার ইচ্ছে থাকে সেক্ষেত্রে উক্ত জার্নালে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণাপত্রের টাইটেল দেখে ধারণা নিতে পারেন। 


টাইটেল এর ক্ষেত্রে লক্ষনীয়

টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে কিছু নিষেধ থাকে বা কিছু বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। অর্থাৎ, আপনি যখন টাইটেল লিখবেন তখন নিচের বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবার বা বাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন।  


১। একান্তই প্রয়োজন না হলে রোমান সংখ্যা ব্যবহার করবেন না; 


২। সেমিকোলন (;) ব্যবহার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। তবে টাইটেলে যদি দুটি অংশ সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয় তাহলে কোলন (:) ব্যবহার করুন; 


৩। খুব বেশি পরিচিত নয় এরকম সংক্ষিপ্ত শব্দ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন;  


৪। প্রশ্নবোধক টাইটেল ব্যবহার না করা ভালো, তবে প্রয়োজনে করতে পারেন; 


৫। "study of," "analysis of" এর ধরনের শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার যতটা সম্ভব পরিহার করবেন; 


৬। গবেষণার সাথে সম্পর্কিত নয় এরকম শব্দ ব্যবহার করবেন না। 


শেষকথা , গবেষণাপত্রের টাইটেল যে কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিভাবে টাইটেল লেখার বিষয়ে চিন্তা করবেন সেটা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল থেকে অন্তত কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাবে। পরবর্তিতে আবারও টাইটেল নিয়ে আর বিস্তারিত কথা হবে। 

Post a Comment

1 Comments